শারীরিক পরিশ্রমের অভাবে শিশুদের মধ্যেও অতিরিক্ত ওজন, টাইপ ২ ডায়াবেটিস, নিদ্রাহীনতাসহ বিভিন্ন ধরণের রোগ এবং নেতিবাচক মানসিকতার প্রকাশ লক্ষ্য করা যায়। নগরে পর্যাপ্ত খেলার মাঠ না থাকা এবং বাসা বাড়িতে খেলাধুলায় জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণ জায়গা না থাকায় শিশুদের প্রয়োজনীয় শারীরিক পরিশ্রম হচ্ছে না। প্রতিদিন স্কুলে হেঁটে যাতায়াতের মাধ্যমে শিশুরা প্রয়োজনীয় শারীরিক পরিশ্রম পেতে পারে। এছাড়া ঢাকা শহরের অন্যতম সমস্যা যানজট, বিশেষত বিদ্যালয়ে যাওয়া এবং আসার সময়টাতে মারাত্মক আকার ধারণ করে, যা হেঁটে স্কুলে যাতায়াতের মাধ্যমে হ্রাস করা সম্ভব। কিন্তু হাঁটার উপযুক্ত পরিবেশ না থাকায় শিক্ষার্থী এবং অভিভাবক হেঁটে যাতায়াতে নিরুৎসাহিত হচ্ছে। বর্তমানে অনেক শিশুরা হেঁটে স্কুলে যাতায়াত করে। তাদের হাঁটার সুবিধার্থে এবং অন্যদের উদ্বুদ্ধ করতে নিরাপদ ও স্বচ্ছন্দময় পরিবেশ তৈরি করা প্রয়োজন।
১৫ মার্চ বৃহষ্পতিবার লালমাটিয়ায় অবস্থিত ‘অরণি বিদ্যালয়’ এবং ‘ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট’ এর উদ্যোগে “হেঁটে বিদ্যালয়ে যাই, অর্থ-স্বাস্থ্য-পরিবেশ বাঁচাই” শ্লোগানটিকে সামনে রেখে শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে প্রশিক্ষণ কর্মসূচি এবং মানববন্ধনে এসব বিষয় উঠে আসে বলে বেঙ্গল বার্তাকে জানানো হয়।
কর্মসূচির অংশ হিসেবে প্রতিষ্ঠানটির লালমাটিয়া ক্যাম্পাসে তৃতীয় থেকে দশম শ্রেণীর প্রায় ১১০ জন শিক্ষার্থী প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে অংশ নেয়। প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনার সময়ে জানা যায়, স্কুলের প্রায় অর্ধেক শিক্ষার্থী হেঁটে যাতায়াত করে। তারা জানায়, হাঁটাপথে নানা ধরনের প্রতিবন্ধকতার সম্মূখীন হতে হয়। এর মধ্যে বেপরোয়া গাড়ি চালানো, গাড়ির হর্ণ, বৃষ্টির দিনে গাড়ির চাকা থেকে কাদা ছিটকে কাপড় ময়লা হওয়া, সরু রাস্তায় গাড়ি দেয়ালের দিকে ঘেষে চলা, এবং যানজট সমস্যা অন্যতম। তারা হাঁটার জন্য নিরাপদ পরিবেশ ও সহায়ক অবকাঠামো তৈরির জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আহ্বান জানায়।
প্রশিক্ষণ কার্যক্রমে ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্টের প্রকল্প কর্মকর্তা মোঃ আতিকুর রহমান প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মূল প্রবন্ধে বলেন, প্রতিদিন কমপক্ষে ১ ঘন্টা শারীরিক পরিশ্রম করা অত্যন্ত জরুরী। হেঁটে যাতায়াতের অনুকূল অবকাঠামো তৈরি করা হলে যানজট কমবে, জ্বালানি চাহিদা হ্রাস পাবে এবং শিক্ষার্থীরা হেঁটে যাতায়াতে উৎসাহী হবে, যা শিক্ষার্থীদের শারীরিক পরিশ্রমের প্রয়োজনীয়তা পূরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
মানববন্ধনে ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর প্রোগ্রাম ম্যানেজার মারুফ হোসেন বলেন, স্কুলে যাতায়াতের জন্য ব্যক্তিগত গাড়ির ব্যবহার বৃদ্ধি পাওয়ায় ঢাকা শহরে যানজট সমস্যা তীব্রতর হয়েছে। প্রতিটি কমিউনিটিতে সমমানের বিদ্যালয় নিশ্চিত করে স্বচ্ছন্দ্যে হেঁটে যাতায়াতের পরিবেশ তৈরি করে এই সমস্যার সমাধান করা যেতে পারে।
অরণী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা নিনা ভূঁইয়া বলেন, শিক্ষার্থীদের হেঁটে বিদ্যালযে যাতায়াতের জন্য সর্বস্তরের শিক্ষার্থী এবং অভিভাবকদের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে। এছাড়া কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে নিয়ে সমন্বিতভাবে কাজ করা প্রয়োজন। ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর পরিচালক গাউস পিয়ারী বলেন, এমনকি অনেক সময় সামাজিক মর্যাদা বাড়ানোর ভ্রান্ত ধারনা থেকে অনেকেই অল্প দুরত্বেও সন্তানদের গাড়ি করে আনা-নেওয়া করে থাকেন। তবে হাঁটার পরিবেশ উন্নত হলে গাড়ি অথবা রিকশার উপর নির্ভরশীলতা কমবে।
মানববন্ধনে আরও উপস্থিত ছিলেন ওয়ার্ক ফর এ বেটার বাংলাদেশ ট্রাস্ট এর ডেপুটি প্রোগ্রাম ম্যানেজার নাজনীন কবীর, সিনিয়র প্রকল্প কর্মকর্তা জিয়াউর রহমান এবং অরণি বিদ্যালয়ের শিক্ষকবৃন্দ ও শিক্ষার্থীরা।