ডায়াবেটিস নির্দিষ্ট মাত্রার বাইরে গেলে তা শরীরের ভয়াবহ ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। সাধারণত স্থুলতাই ডায়াবেটিসের মূল কারণ। গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের মেদ বেশি তারা সহজেই ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন। কাজেই ডায়াবেটিস থেকে বাঁচতে স্থুলতা কমানোর বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে খাওয়া-দাওয়ার ক্ষেত্রে সচেতনতা বেশি জরুরি।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, এমন ১২টি খাবার আছে যেগুলো ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সবচেয়ে ক্ষতিকর খাবার বলে বিবেচিত।
সাদা চালঃ যত সাদা চালের ভাত খাবেন, টাইপ ২ ডায়াবেটিস রোগীদের ঝুঁকি তত বাড়বে। ২০১২ সালের এক গবেষণায় দেখা গেছে, সাদা চালের খাবার খেলে প্রতিদিনই ঝুঁকির মাত্র ১১ শতাংশ হারে বেড়ে যায়। কারণ এই চাল প্রক্রিয়াজাত করে সাদা করা হয়। তাছাড়া এই খাবার চিনির মাত্রাও বাড়িয়ে দেয়। তাই ডায়াবেটিসের ঝুঁকি এড়াতে সাদার পরিবর্তে বাদামী চাল খাওয়ার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। এতে রক্তে সুগারের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে
ব্লেন্ডেড কফিঃ ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য সিরাপ, সুগার এবং ক্রিম সমৃদ্ধ ব্লেন্ডেড কফি মারাত্মক ক্ষতিকর বলে বিবেচিত হয়। কেননা এর ব্লেন্ডেড সংস্করণে রক্তে গ্লুকোজ বাড়ানোর উপাদান প্রচুর রয়েছে। এক কাপ ব্লেন্ডেড কফিতে ৫০০ ক্যালরি, ৯৮ গ্রাম কার্ব এবং ৯ গ্রাম ফ্যাট থাকে। তাই এর পরিবর্তে নন-ফ্যাট সংস্করণ কফি বেছে নিন।
তরমুজঃ সব তরতাজা ফলেই ভিটামিন ও ফাইবার রয়েছে। কিন্তু তরমুজের পুষ্টিগুণ ভালো থাকলেও এসব ফলে গ্লুকোজের পরিমাণ প্রচুর। তাই তরমুজের;পরিবর্তে ব্লুবেরি এবং বেরি জাতীয় ফল বেশি বেশি খান।
চাইনিজ খাবারঃ মুখরোচক হলেও চাইনিজ খাবার ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ক্ষতিকর। এতে রক্তে সুগারের মাত্রা বাড়িয়ে দেওয়ার মতো যথেষ্ট উপাদান রয়েছে। এর বদলে বাড়িতে চাইনিজ খাবার বানিয়ে নিন স্বাস্থ্যকরভাবে, যা আপনার রক্তে চিনির পরিমাণ বাড়াবে না।
পেস্ট্রিঃ ডোনাট, টোস্ট বা পেস্ট্রির মতো মজার খাবার ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য ভয়ংকর হতে পারে। এসব খাবার প্রক্রিয়াজাত সাদা চাল থেকে তৈরি হয় যাতে উচ্চমাত্রার ফ্যাট, কার্ব এবং সোডিয়াম রয়েছে। বরং এসব খাবারের পরিবর্তে বাদামী চালের তৈরি কেক খান। কম চিনি রয়েছে এমন পিনাট বাটার ব্যবহার করুন।
ফ্রুট স্মুথিঃ এসব খাবারের নাম শুনলে মনে হয় খুবই স্বাস্থ্যকর। কিন্তু এটি চিনিতে পরিপূর্ণ। তাই খেতে মন চাইলে বাড়িতে চিনি ছাড়া তৈরি করে উপভোগ করুন।
ট্রেইল মিক্সঃ সংরক্ষণ করা হয় এমন ট্রেইল মিক্সে বাদাম, শুকনো ফল এবং মিল্ক চকলেট রয়েছে। এদের মধ্যে বাদাম ছাড়া বাকিগুলো ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য হুমকি। তাই এর পরিবর্তে নিম্নমাত্রার কার্বযুক্ত সূর্যমুখীর বীচি, ওয়ালনাট, রোস্টেড পিনাট এবং আলমন্ড দিয়ে ট্রেইল মিক্স বানাতে পারেন। এই মিক্স কার্বোহাইড্রেটসমৃদ্ধ পাউরুটি দিয়ে খেতে পারেন।
রিফাইন্ড সিরিয়ালঃ উপাদেয় সিরিয়াল রক্তে সুগারের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়। সিরিয়ালের কারণে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা একেক জনের দেহে একেকভাবে দেখা দিতে পারে। তাই এটি ডায়াবেটিস রোগীদের এড়িয়ে চলাই ভালো। এর পরিবর্তে সবজি ও ডিমের সাদা অংশ খেতে পারেন। তবে ডিমের কুসুমে কোলেস্টরেল রয়েছে তা ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।
ফলের রসঃ সকালের নাস্তায় ফলের রস খুব স্বাস্থ্যকর হলেও তা ডায়াবেটিস রোগীর জন্য হুমকি। তাছাড়া দোকানে পাওয়া যায় এমন ফলের রসে প্রচুর পরিমাণে চিনি থাকে। তাই এর বদলে কম সুগার রয়েছে এমন ফলের একটি বা দুটি টুকরো খেতে পারেন।
পাস্তা আলফ্রেডোঃ আলফ্রেডো সস ক্রিম, পারমেসান চিজ এবং বাটার থেকে তৈরি হয়। এতে রয়েছে ১ হাজার ক্যালরি, ৭৫ গ্রাম ফ্যাট এবং ১০০ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট। তাই এটিও বাদ দেওয়া জরুরি। এর পরিবর্তে গমের তৈরি পাস্তা খেতে পারেন টমেটো সস দিয়ে। এতে রয়েছে ২৮০ ক্যালরি এবং ১৪ গ্রাম ফ্যাট।
ফ্রেঞ্চ ফ্রাইঃ এটি ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বেশ মারাত্মক খাবার। একটু বেশি পরিমাণ খেলে রক্তে সুগারের মাত্রা বেড়ে যায়। তাই ডায়াবেটিস অ্যাসোসিয়েশন এটিকে এড়িয়ে চলার পরামর্শ দিয়েছেন।
চর্বিসমৃদ্ধ মাংসঃ ডায়াবেটিস রোগীরা হৃদরোগের ঝুঁকিতে থাকেন। চর্বিযুক্ত মাংস পুষ্টিকর হলেও এতে প্রচুর পরিমাণে সম্পৃক্ত ফ্যাট রয়েছে, যা এসব রোগীদের হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। তাই এর বদলে প্রোটিনসমৃদ্ধ বিন, লেনটিস ইত্যাদি থেকে পারেন। তাছাড়া মাছ ও সামুদ্রিক খাবারও ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী।