নারায়ণগঞ্জের সোনারগাঁ’র জয়রামপুর গ্রামে ব্যতিক্রমী এক মেলা বসে, যার নাম বউমেলা। এখানে প্রতিবছর পহেলা বৈশাখে দেড়শ বছরের পুরোনো একটি বটগাছকে ঘিরে বউমেলা অনুষ্ঠিত হয়। এটি স্থানীয়ভাবে “বটতলার মেলা” নামেও পরিচিত। শত বছরের পুরোনো এ মেলার আয়োজন করে থাকেন হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা।
জয়রামপুর গ্রামের মানুষের ধারণা, প্রায় ১০০ বছর ধরে চলছে এই মেলা । বটগাছটিকে দেবী মনে করে আমিনপুর, ভট্টপুর, সাহাপুর, বাণীনাথপুর, কৃষ্ণপুরা, গোবিন্দপুর, পানাম-গাবতলীসহ বিভিন্ন গ্রাম থেকে শত শত নারীরা পূজা-অর্চনা করতে এখানে আসেন।
লোকমুখে প্রচলিত আছে, ১৯১১ সালে এ এলাকার জমিদার শ্যামচরণ ভৌমিক স্ত্রীলোকদের কথা চিন্তা করে বটগাছতলায় মেলাটির আয়োজন করেন। এরপর থেকে জায়গাটি বউ গাছতলা নামে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। বটবৃক্ষের নিচে এই মেলা বসে, যদিও হিন্দুধর্মাবলম্বীরা সিদ্ধেশ্বরী দেবীর পুজার জন্য এখানে সমবেত হয়।
বর্ষবরণের এই দিনে কুমারী, নববধূ, জননীসহ সব বয়সের নারীরা তাঁদের মনস্কামনা পূরণের আশায় এই মেলায় এসে পূজা-অর্চনার উদ্দেশ্যে বটতলায় একত্র হয়ে থাকেন। দেবী বটগাছের কাছে তাঁরা প্রার্থনা করেন- তাঁরা সবাই যেন ঘরের লক্ষ্মী হতে পারেন, সব ঝগড়া-বিবাদ মুছে ফেলে নতুন বছরে দাম্পত্য জীবন যেন সুখের হয়।
পূজার অপেক্ষায় পহেলা বৈশাখ সকাল থেকেই গ্রামের নারীরা উপোস থাকেন। সবাই কালীরূপী বটগাছকে পূজা দিতে অর্ঘ্য, নানারকম ফুল ও ফলমূল বেতের সাজিতে সাজিয়ে নিয়ে আসেন। সন্দেশ, মিষ্টি, ধান, দূর্বার সঙ্গে মৌসুমি ফলমূল নিবেদন করে ভক্তরা।
মেলায় ঘর গৃহস্থালির উপকরণসহ মেয়েদের বাহারি প্রসাধনীর অনেক দোকান বসে। এলাকার বিভিন্ন বয়সের নারীরা মেলায় এসে কেনাকাটা করেন। কাঠের জিনিসপত্র, খেলনা, মণ্ডা-মিঠাই, ফিরনি-বাতাসা, খই-মুড়ি পাওয়া যায়। সেইসঙ্গে মেলাজুড়েই থাকে মৃৎশিল্পের আধিপত্য। নানা রঙের মাটির হাঁড়ি, কলস, হাতি, ঘোড়া, বাঘ, কবুতর ইত্যাদি কারুকাজময় মৃৎশিল্প উল্লেখযোগ্য হারে পাওয়া যায়।
মেলায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠান উপভোগ করতে অসংখ্য মানুষের ভিড় জমে। এ ছাড়া রয়েছে সার্কাস, পুতুলনাচ, নাগরদোলাসহ বিনোদনের নানা আয়োজন।
বউমেলায় পাঁঠাবলির রেওয়াজও বেশ পুরনো। বদলে যাচ্ছে পুরনো অর্চনার পালা। এখন কপোত-কপোতি উড়িয়ে ভক্তরা দেবীর কাছ থেকে শান্তির বার্তা পেতে চায়।