ধূমপান স্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। ধূমপানের কুফল হিসেবে ফুসফুসের ক্যান্সার, হার্টের রক্তনালী সরু হয়ে হার্ট এ্যাটাকের ঝুঁকি বৃদ্ধি, মস্তিষ্কে রক্ত চলাচলে বাধা সহ নানা ক্ষতিকর দিক রয়েছে ধূমপানের। অনেকেই ধূমপানকে চিরতরে নির্বাসনে দিতে চান। ধুমপান ছেড়ে দেওয়ার পর কিছু বছরের মধ্যে শরীর স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে বলে জানান ডাক্তাররা।
২০ মিনিট: সিগারেট ছাড়ার ২০ মিনিটের মধ্যেই আমাদের রক্তচাপ কমে গিয়ে স্বাভাবিক হয়ে যায়। হাত ও পায়ে রক্ত সঞ্চালন বাড়ে।
৮ ঘণ্টা: শেষ সিগারেট খাওয়ার ৮ ঘণ্টার মধ্যে আপনার শরীরে জমে থাকা কার্বন মনোক্সাইড গ্যাস ৫০ শতাংশ পর্যন্ত কমে যাবে। অক্সিজেনের মাত্রা বাড়ায় ফুসফুস থেকে ক্ষতিকারক ও অস্বস্তিকর ব্যাকটেরিয়া দূর হবে।
৪৮ ঘণ্টা: এই সময়ের মধ্যে ফুসফুসে জমে থাকা নিকোটিন শরীর থেকে বেরিয়ে যাবে। ফলে ঘ্রাণ ও স্বাদ বোধ বাড়বে।
৩ দিন: ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার ৩ দিনের মধ্যে আপনার ব্রঙ্কিয়াল টিউব প্রসারিত হবে। ফলে অনেক স্বাভাবিক ভাবে শ্বাস-প্রশ্বাস চালাতে পারবেন, এনার্জি ফিরে আসবে, স্ট্রেস কমবে।
২ সপ্তাহ-২ মাস: এই সময়ের মধ্যে শরীরে রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক হয়ে ফুসফুসের কর্মক্ষমতা ৩০ শতাংশ বেড়ে যায়। ফলে হাঁটাচলা করতে আগে যেমন হাঁফিয়ে উঠতেন, এই সময় থেকে তা কমে গিয়ে এনার্জি ফিরে পাবেন।
৩-৯ মাস: এই সময় থেকেই বুঝতে পারবেন আপনার আর নিশ্বাস নিতে বিশেষ কষ্ট হচ্ছে না। ধূমপানের কারণে যে খুসখুসে কাশি হতো তাও অনেক কমে এসেছে। এই সময় থেকে ব্রঙ্কিয়াল টিউবের ফাইবার আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসতে থাকে। যা ফুসফুস থেকে ব্যাকটেরিয়ার দূর করে পরিষ্কার রাখে।
১ বছর: ধূমপান ছাড়ার ১ বছর পরও যারা কোনদিন ধূমপান করেননি তাদের তুলনায় আপনার হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি থাকে দ্বিগুণ।
৫ বছর: সিগারেট ছেড়ে দেওয়ার ৫ বছরের মধ্যে স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি কমে যায়। কোনদিন ধূমপান না করলেও যে ঝুঁকি থাকে, ৫ বছর পর ঝুঁকির পরিমাণ ঠিক ততটাই কমে আসে।
১০ বছর: ধূমপানের ফলে ফুসফুসের যে ক্ষতি হয়, ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার পর ১০ বছর সময় লাগে ফুসফুসের আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসতে।
১৫ বছর: ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার ১৫ বছর পর হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি ততটা, যতটা এমন কারও যিনি কোনদিন ধূমপান করেননি।
ধূমপান ত্যাগের প্রাথমিক পর্যায়ে কিছুটা শারীরিক ও মানসিক অস্বস্তি বোধ হতে পারে। কারণ, দীর্ঘদিন ধূমপানের ফলে এর প্রতি শারীরিক ও মানসিক নির্ভরতা গড়ে ওঠে। তবে ধীরে ধীরে এ সমস্যাগুলো কেটে যায়।
- মুখে ‘কী যেন নেই’ ধরনের অস্বস্তি কাটাতে চিনিমুক্ত চুইংগাম, মিন্ট বা ক্যান্ডি ব্যবহার করতে পারেন।
- হাত বা আঙুলের অস্বস্তি কাটাতে মাঝেমধ্যে দুই আঙুলের ফাঁকে পেনসিল বা পেপার ক্লিপ, হাতে ছোট আকারের বল ব্যবহার করতে পারেন।
- প্রচুর পরিমাণে পানি পান করুন।
- শাকসবজি ও ফলমূল বেশি খান।
- মনকে ব্যস্ত রাখুন।
- ম্যাগাজিন-গল্পের বই পড়ুন, পছন্দের গান শুনুন, সুস্থ বিনোদনে অংশ নিন।
- প্রতিদিন হালকা ব্যায়াম করুন।
- ধূমপায়ীদের সঙ্গ যথাসম্ভব এড়িয়ে চলুন।
ধীরে ধীরে প্রতিদিন একটি বা দুটি বা সপ্তাহে নির্দিষ্ট পরিমাণ করে সিগারেট সেবন কমিয়েও সম্পূর্ণ ত্যাগের লক্ষ্যে পৌঁছতে পারেন।