তিতুমীর কলেজের স্নাতক (বাণিজ্য) দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র রাজীব হোসেনের হাত হারানোর ঘটনায় দুজনকে গ্রেফতার করেছে শাহবাগ থানা-পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- বিআরটিসি বাসের চালক ওয়াহিদ ও স্বজন বাসের চালক খোরশেদ। শাহবাগ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) জাফর আলী দুই চালককে গ্রেফতারের বিষয় নিশ্চিত করেন।
গত মঙ্গলবার বিআরটিসির একটি দোতলা বাসের পেছনের ফটকে দাঁড়িয়ে গন্তব্যে যাচ্ছিলেন রাজধানীর মহাখালীর সরকারি তিতুমীর কলেজের ছাত্র রাজীব হোসেন (২১)। হাতটি বেরিয়েছিল সামান্য বাইরে। হঠাৎই পেছন থেকে একটি বাস বিআরটিসির বাসটিকে ওভারটেক করার জন্য বাঁ দিক গা ঘেঁষে পড়ে। দুই বাসের প্রবল চাপে রাজীবের হাত শরীর থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। দু-তিনজন পথচারী দ্রুত তাকে পান্থপথের শমরিতা হাসপাতালে নিয়ে যান। কিন্তু চিকিৎসকেরা চেষ্টা করেও বিচ্ছিন্ন সে হাতটি রাজীবের শরীরে আর জুড়ে দিতে পারেননি। শমরিতা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলেছে, বিচ্ছিন্ন হওয়া হাতটি জোড়া লাগানো সম্ভব নয়, তার অবস্থা গুরুতর। তার অস্ত্রোপচার করা হয়েছে।
রাজীব হোসেনের চিকিৎসা ব্যয় বিআরটিসি ও স্বজন পরিবহনকে বহন করতে নির্দেশ দিয়েছে আদালত। সেই সঙ্গে রাজীব হোসেনকে এক কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ কেন দেয়া হবে না- তা জানতে চেয়ে রুল দিয়েছে হাইকোর্ট। যাত্রীদের চলাচলে বিদ্যমান আইন কঠোরভাবে কার্যকরের নির্দেশ কেন দেয়া হবে না, ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধে প্রয়োজনে আইন সংশোধন ও নতুন করে বিধিমালা প্রণয়নের নির্দেশ কেন দেয়া হবে না- তাও জানতে চাওয়া হয়েছে হাইকোর্টের রুলে। আগামী চার সপ্তাহের মধ্যে স্বরাষ্ট্র সচিব, সড়ক পরিবহন সচিব, পুলিশের মহাপরিদর্শক, ডিএমপি কমিশনারসহ আট বিবাদীকে রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে।
এক রিট আবেদনের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে বিচারপতি সালমা মাসুদ চৌধুরী ও বিচারপতি এ কে এম জহিরুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ বুধবার রুলসহ এ আদেশ দেয়। এ বিষয়ে সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন যুক্ত করে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রুহুল কুদ্দুস কাজল হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন। আদালতে তিনি নিজেই শুনানি করেন। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অরবিন্দ কুমার রায়। রুহুল কুদ্দুস কাজল পরে সাংবাদিকদের বলেন, আদালত বলেছেন, রাজীবের হাত রিপ্লেস করার সুযোগ থাকলে তার ব্যয়ভারও দুই বাস কর্তৃপক্ষকে বহন করতে হবে।
প্রসঙ্গত, রাজীবের বাবা-মা কেউ বেঁচে নেই। তিন ভাইয়ের তিনি সবার বড়। পড়ালেখার পাশাপাশি একটি প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার টাইপ করে তিনি নিজের এবং ছোট দুই ভাইয়ের খরচ চালাতেন বলে জানা যায়।