নিপা এক ভয়াবহ আতঙ্কের নাম। নিপা ভাইরাস খুব দ্রুত এক আক্রান্ত প্রাণীর দেহ থেকে অন্য প্রাণীর দেহে ছড়িয়ে পড়তে পারে। নিপায় কেউ আক্রান্ত হলে ৭৫ শতাংশ মৃত্যুর আশংকা বললেই চলে। তাই আগে থেকে সতর্ক হতে হবে।
১৯৯৮ সালে মালয়েশিয়া প্রথম এই ভাইরাসের প্রকোপ দেখা দেয়। সেখানে বাড়ির পোষ্য কুকুর, বেড়াল, ঘোড়া, ছাগলের দেহে এই ভাইরাসের উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।
বাংলাদেশে প্রথম নিপা ভাইরাস থাবা বসায় ২০০৪ সালে। তখন নিপার প্রকোপে অনেক মানুষ প্রাণ হারান।
পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতের কেরালা রাজ্যের পেরম্বরাসহ বিভিন্ন স্থানে সাম্প্রতিককালে নিপার প্রকোপে ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। নিপা আক্রান্তদের চিকিৎসা করা এক নার্সেরও মৃত্যু হয়েছে।
নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত রোগের উপসর্গঃ
নিপা ভাইরাসে আক্রান্ত হলে প্রাথমিক পর্যায়ে বিশেষ কোনও লক্ষণ বোঝা যায় না। জ্বর, মাথা ধরা, পেশীর যন্ত্রণা, বমি বমি ভাবের মতো সাধারণ ‘ভাইরাল ফিভার’-এর লক্ষণ দেখা যায়।
নিপা ভাইরাস খুব দ্রুত শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। ৫ থেকে ৬ দিনের মধ্যে কোমায় চলে যেতে পারেন রোগী। ফুসফুসে সংক্রমণ হলে মৃ্ত্যুও ঘটতে পারে। নিপার কোনও টীকা এখনও আবিষ্কৃত হয়নি।
যেভাবে নিপা ভাইরাস ছড়ায়ঃ
নিপা ভাইরাসের প্রধান বাহক বাদুড়। বাদুড় নিপা ভাইরাসের বাহক হলেও নিজে আক্রান্ত হয় না। নিপা ভাইরাস বাহিত বাদুড়ের খাওয়া ফল বা মলমূত্র মাটিতে পড়ে ঘাসের সাথে মিশে এবং সেই ফল বা ঘাস গরু, ছাগল বা অন্যান্য প্রাণি খেলে তাঁদের শরীরে ভাইরাস প্রবেশ করে। সেই পশুর মাংস ভালোমতো সিদ্ধ না করে খেলে মানুষের শরীরে প্রবেশ করতে পারে। এছাড়া বাদুড়ে খাওয়া বা মুখ দেওয়া ফল বা রস মানুষ খেলে বা অনেকসময় ছুঁলেও ভাইরাস আক্রান্ত হবার সম্ভাবনা থাকে।
নিপা ভাইরাস থেকে বাঁচার উপায়ঃ
নিপা ভাইরাস থেকে বাঁচতে হলে আগে সচেতনতা বাড়াতে হবে। বাজার থেকে ফল নেওয়ার সময় ভাল করে দেখে কিনতে হবে। মাঠেঘাটে পড়ে থাকা ফল না খাওয়াই ভালো।
মাংস অল্প আঁচে, বেশি সময় নিয়ে রান্না করলে, আগুনের তাপে জীবাণু মরে যায়। ফলে জীবাণু বা ভাইরাস ঘটিত রোগের হাত থেকে সহজেই রেহাই পাওয়া সম্ভব।
আক্রান্ত রোগীর পরিচর্যাকারিকে অবশ্যই মাস্ক ব্যবহার করা ও যথাযথ পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর রাখতে হবে।
বর্তমানে দেশে উদ্বেগজনক বিশেষ কোন পরিস্থিতি তৈরি না হলেও নিপা সম্পর্কে সবসময় সতর্ক থাকা প্রয়োজন। কারন, একমাত্র সতর্কতাই নিপা ভাইরাস বিস্তারের মতো জটিল সমস্যা থেকে রক্ষা করতে পারে।