নিষেধাজ্ঞা পেছনে ফেলে গতকাল শনিবার মধ্যরাতে চালকের আসনে বসে গাড়ি চালিয়েছেন সৌদি নারীরা। এই দিনটির জন্য নারী অধিকারকর্মীদের লড়তে হয়েছে প্রায় ৩০ বছর। তিন দশকের লড়াইয়ে অর্জিত এই অধিকার নারীর অর্থনৈতিক মুক্তি এনে দেবে বলে মনে করেন দেশটির প্রতিষ্ঠিত নারীরা।
সৌদি আরবের নারীরা এখন থেকে গাড়ি চালানোর আনুষ্ঠানিক বৈধতা পেয়েছে। গতকাল পর্যন্ত কয়েক দশক ধরে সৌদি আরবে নারীদের গাড়ি চালানোর ওপর নিষেধাজ্ঞা বলবৎ ছিল। কিন্তু তরুণ মোহাম্মদ বিন সালমান যুবরাজ হয়ে তাঁর দেশকে আধুনিক করতে নানামুখী সংস্কার কার্যক্রম হাতে নেন। এরই অংশ হিসেবে গত বছরের সেপ্টেম্বরে বাদশাহ নারীদের গাড়ি চালানোর সুযোগ দেওয়া সংক্রান্ত প্রস্তুতি নেওয়ার নির্দেশ দেন। এরপর নারীর গাড়ি চালানোর অধিকারের পথ সুগম হয়।
গতকাল মধ্যরাতে নারীরা পূর্বাঞ্চলীয় শহর খোবারের প্রধান সড়কে চালকের আসনে বসে গাড়ি হাঁকিয়ে বেড়িয়েছেন। প্রথম দিকে যেসব নারী ড্রাইভিংয়ের লাইসেন্স পেয়েছেন, তাঁদের একজন জেদ্দার ৪৭ বছর বয়সী মনোবিজ্ঞানী সামিরা আল-ঘামদি। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রস্তুত। এটি আমাদের জীবনকে পাল্টে দেবে।’
যেসব নারীর এরই মধ্যে গাড়ির চালনার বিদেশি লাইসেন্স রয়েছে, তাঁরা চলতি মাসের শুরুর দিকে তা পরিবর্তন করে নিজ দেশের লাইসেন্স নিতে শুরু করেছেন। তাই সংখ্যাটা এখনো কম। তবে অনেকেই এরই মধ্যে রাষ্ট্র পরিচালিত প্রশিক্ষণ কেন্দ্রগুলোয় গাড়ি চালনা শিখছেন। আশা করা হচ্ছে, ২০২০ সাল নাগাদ নারী চালকের সংখ্যা ৩০ লাখ হবে।
দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, নারী ট্রাফিক পুলিশ নিয়োগ দেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে কবে নাগাদ হবে তা নিশ্চিত নয়।
প্রসঙ্গত, নারীদের গাড়ি চালানোর অধিকার চেয়ে প্রথম রাস্তায় নামার ঘটনাটি ১৯৯০ সালের ৬ নভেম্বর ঘটে। ওই দিন ৪০ জনের বেশি সৌদি নারী নিষেধাজ্ঞা ভেঙে রিয়াদে জনসমক্ষে গাড়ি নিয়ে নামেন। তবে তাঁদের আটক করে ১ দিন কারাগারে রাখা হয়। এরপর ২০০৭ সালের সেপ্টেম্বরে গাড়ি চালানোর অধিকার চেয়ে সহস্রাধিক নারী বাদশাহ আবদুল্লাহর কাছে আবেদন করেন। ২০১১ সালের ১৭ জুন একদল নারী অধিকারকর্মী ফেসবুকে ‘উইম্যান-টু-ড্রাইভ’ নামে প্রচার শুরু করেন। দুই সপ্তাহে অন্তত ৭০ জন নারী গাড়ি নিয়ে রাস্তায় নামলে তাঁদের অনেককে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল।