বাংলাদেশে অবস্থানরত রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিক্ষোভের মুখে স্থগিত হয়ে গেল প্রত্যাবাসন কার্যক্রম। বৃহস্পতিবার প্রথম দফায় ৩০ পরিবারের ১৫০ জন রোহিঙ্গা মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে ফিরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু রোহিঙ্গা শরণার্থীদের মুখে এক কথা ‘আঁরা বর্মাত ন যাইয়ুম’, অর্থাৎ আমরা বার্মায় ফিরে যাব না।
মিয়ানমারের একজন মন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের গ্রহণের জন্য ওপারে উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু বৃহস্পতিবার বিকেল চারটার পর শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ আবুল কালাম জানিয়ে দেন, সরকারের প্রস্তুতি থাকা সত্ত্বেও স্বেচ্ছায় রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সম্ভব হলো না। কখন হবে, তা–ও তিনি নির্দিষ্ট করে বলেননি।
বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টার দিকে পাঁচটি বাস ও তিনটি ট্রাক নিয়ে আরআরআরসি কার্যালয়ের কর্মকর্তারা উনচিপ্রাং ক্যাম্পে যান। এই ক্যাম্পে প্রত্যাবাসনের জন্য আগে থেকে প্রায় ৩০০ জন রোহিঙ্গাকে তালিকাভুক্ত করা হয়েছিল।সেখানে রোহিঙ্গাদের তিন দিনের খাবার ও প্রয়োজনীয় দ্রব্য, নগদ অর্থ এবং নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।
বেলা সাড়ে ১২টার দিকে রোহিঙ্গাদের গাড়িতে ওঠার অনুরোধ করা হলে ‘আঁরা বর্মাত ন যাইয়ুম’ বলে চিৎকার করতে থাকে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা। এরপর আশপাশের ক্যাম্প থেকে হাজারো রোহিঙ্গা ঘটনাস্থলে এসে প্রত্যাবাসনবিরোধী বিক্ষোভ শুরু করে। বেলা সোয়া দুইটা পর্যন্ত চলে এই বিক্ষোভ। বিক্ষোভে হ্যান্ড মাইকে স্লোগান ধরেন রোহিঙ্গা নেতা খাইরুল আমিন। স্লোগান ছিল ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ এবং ‘আঁরা বর্মাত ন যাইয়ুম’। সেখানে র্যাব, পুলিশ ও বিজিবির সদস্য মোতায়েন ছিলেন।
বিক্ষোভের কারণ জানতে চাইলে রোহিঙ্গা নেতা খাইরুল আমিন বলেন, রাখাইন রাজ্যে ফিরে যাওয়ার মতো পরিবেশ তৈরি হয়নি। তা ছাড়া গণহত্যা, ধর্ষণ, আগুন দিয়ে ঘরবাড়ি ধ্বংস ও সম্পদ লুটপাটের বিচার হয়নি। মিয়ানমার সরকারের পক্ষ থেকে নিরাপত্তার নিশ্চয়তা ও নাগরিকত্ব প্রদানের আগাম ঘোষণা না পাওয়া পর্যন্ত কোনো রোহিঙ্গা বাংলাদেশ থেকে রাখাইনে ফিরে যাবে না। জোর করে ফেরত পাঠালে তা হবে মানবাধিকার লঙ্ঘন।