উদ্ভিদ,মাছ থেকেও কি মহামারির দিন এসে গেল

লাইফস্টাইল

শুধুই শিম্পাঞ্জি, শুয়োর, বাদুড় বা প্যাঙ্গোলিন নয়। এমন দিনও আসছে, যখন আশপাশের গাছপালা আর অসংখ্য অমেরুদণ্ডী প্রাণীর থেকেও লক্ষ কোটি ভাইরাস, ব্যাক্টেরিয়া, ছত্রাক ঝাঁপিয়ে পড়বে আমাদের উপর। তাদের সংক্রমণে অতিষ্ঠ হয়ে যাবে মানুষের জীবন, যাপন। হবে একের পর এক মহামারি।

যাদের থেকে মহামারি, অতিমারির কথা কল্পনাও করতে পারেন না সাধারণ মানুষ সেই কেঁচো, মৌমাছি বা নানা ধরনের মাছের থেকেও একের পর এক ছড়িয়ে পড়বে বহু অজানা-অচেনা ভাইরাস, ব্যাক্টেরিয়া ও ছত্রাক।

বিজ্ঞানীদের অনুমান, আর কয়েক দশকের মধ্যেই ১০ লক্ষ বা তারও বেশি সংখ্যায় বিভিন্ন প্রজাতির জীব পুরোপুরি বিলুপ্ত হয়ে যাবে। পৃথিবী থেকে একেবারেই নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।

উদ্ভিদের ভাইরাস মানুষের দেহে!

কয়েক বছর আগে সিঙ্গাপুরের জিনোম ইনস্টিটিউট আর আমেরিকার সান ডিয়েগোর স্টেট ইউনিভার্সিটির একদল বিজ্ঞানী মানুষের অন্ত্রে কী কী ভাইরাস থাকে, তার পরীক্ষা করতে গিয়ে চমকে যান। তাঁরা দেখেন, মানুষের অন্ত্রে রয়েছে অন্তত ৩৫ রকমের এমন সব ভাইরাস, যাদের আদত ‘ঠিকানা’ বিভিন্ন উদ্ভিদের দেহ! বিজ্ঞানীরা দেখেন, উদ্ভিদের দেহের চেনা মুলুক ছেড়ে এসেও ওই সব ভাইরাস মানুষের দেহে বেঁচেবর্তে আছে। নিজেদের বংশবৃদ্ধি করে যাচ্ছে।

এর জন্য দায়ী কে

মানুষই এর এক ও একমাত্র কারণ। যথেচ্ছ বন্যপ্রাণী মেরে কেটে খাওয়া, তাদের দেহাবশেষের অবাধ ব্যবহার ও ব্যবসা আর নির্বিচারে অরণ্য ধ্বংস করে বন্যপ্রাণীর আবাসস্থলকে নির্মূল করে দেওয়া। এর ফলে, বন্যজীবন আর মানুষের মধ্যে যে অদৃশ্য দেওয়াল আছে, তা ধীরে ধীরে মুছে যাচ্ছে। আর বন্যপ্রাণীদের মধ্যে থাকা বিভিন্ন ভাইরাস মানবশরীরকে নিজেদের আশ্রয় হিসাবে পরখ করে দেখার সুযোগ পাচ্ছে।

এইচআইভি, ইবোলা, জিকা, নীপা, সার্স, এভিয়ান ফ্লু, সোয়াইন ফ্লু-র মতো যে মারণ ভাইরাসগুলি গত ৫০ বছরে এসেছে বা ‘উপচে পড়েছে’, তার সবক’টিই এসেছে বাদুড়, শিম্পাঞ্জি, প্যাঙ্গোলিন, বন্য শুয়োর, বন্য পাখির মতো বিভিন্ন বন্যপ্রাণী থেকে।

বাদুড়, শিম্পাঞ্জি, প্যাঙ্গোলিন, বা শুয়োর— এরা সকলেই স্তন্যপায়ী। আর পাখি স্তন্যপায়ী না হলেও বিবর্তনে মানুষের কাছাকাছি থাকা একটি প্রাণী। তাই এদের কোষের সঙ্গে মানবদেহের কোষের জৈব রসায়নের মিল অনেকটাই। ফলে এই বন্যপ্রাণীদের থেকে মানুষের মধ্যে ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়াটা তুলনামূলক ভাবে অনেকটাই সহজ। খুব সম্ভবত এই ভাবেই ‘সার্স-কভ-২’-ও এসেছে বাদুড় বা প্যাঙ্গোলিন, অথবা দু’টো থেকেই।

শেষের সে দিন বড়ই ভয়ঙ্কর

প্রকৃতির নিয়মগুলিকে একটু একটু করে ভাঙতে গিয়ে আমরা এখন জীবন আর বিবর্তনের শক্তিকে চ্যালেঞ্জ করে ফেলেছি। যা খুব সহজেই আমাদের বেঁচে থাকাকে আরও কঠিন করে তুলতে পারে। তার প্রমাণ আমরা শেষ ক’বছরে পর পর পেয়েছি- ইবোলা, নীপা, কোভিড…।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *