রাজনীতি

নির্বাচনি প্রতীক হিসেবে শাপলা ফুলে কেন আগ্রহ এনসিপি’র?

বাংলাদেশের নতুন উদীয়মান রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) দলীয় প্রতীক হিসেবে জাতীয় ফুল শাপলা চেয়ে নির্বাচন কমিশনে আবেদন করার পর থেকে রাজনৈতিক অঙ্গনে শুরু হয়েছে জোর আলোচনা ও বিতর্ক। ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এনসিপির শাপলা দাবিকে ঘিরে চলছে মতবিরোধ।

এনসিপি’র নেতাকর্মীরা ইতোমধ্যে সামাজিক মাধ্যমে শাপলা প্রতীকের পক্ষে প্রচার শুরু করেছেন। যদিও দলটি কলম ও মোবাইল ফোন প্রতীককেও বিকল্প হিসেবে তালিকায় রেখেছে, তবু স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে—তাদের প্রধান আকাঙ্ক্ষা শাপলা প্রতীকই।

এনসিপি’র আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, “বাংলাদেশের নদী, প্রকৃতি ও জলাশয়ের প্রতীক শাপলা। আমরা চাই রাজনীতিতেও এই পরিচয় প্রতিফলিত হোক। তাই শাপলাকে আমরা আমাদের দলীয় প্রতীক হিসেবে চাই।”

নদীমাতৃক বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি হিসেবে শাপলাকে তুলে ধরে তিনি জানান, “শাপলা গ্রামবাংলার মানুষের চেনা একটি ফুল। এর সঙ্গে আবেগ ও পরিচয়ের সম্পর্ক রয়েছে।”

এনসিপি’র দক্ষিণাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ বলেন, “প্রতীক হওয়া উচিত জনমানুষের সঙ্গে সংযুক্ত কিছু। শাপলা এমনই এক প্রতীক যেটির সঙ্গে দেশের প্রান্তিক মানুষের আত্মিক সম্পর্ক রয়েছে।”

তবে এনসিপির এ দাবির বিপরীতে উঠছে আপত্তিও। অনেকেই দাবি করছেন, শাপলা বাংলাদেশের জাতীয় প্রতীক, যা কোনো রাজনৈতিক দলের জন্য বরাদ্দ হওয়া উচিত নয়।

কিন্তু সংবিধান বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শাপলা জাতীয় প্রতীকের কেন্দ্রবিন্দু হলেও তা এককভাবে ‘জাতীয় প্রতীক’ নয়। সংবিধানে শাপলার সঙ্গে রয়েছে ধানের শীষ, পাটের কুড়ি পাতা ও তারকা চিহ্ন—এই যৌথ সমন্বয়ে তৈরি হয়েছে বাংলাদেশের জাতীয় প্রতীক।

সিনিয়র আইনজীবী শাহদীন মালিক বলেন, “জাতীয় প্রতীকে শাপলা প্রধান উপাদান হলেও এটি এককভাবে নয়, বরং সমন্বিত। ফলে এই ফুলকেই আলাদা করে দলীয় প্রতীক হিসেবে বরাদ্দ দেওয়া নিয়ে বিতর্ক থাকতেই পারে।”

তবে এনসিপির আবেদন করার মাত্র তিনদিন আগে মাহমুদুর রহমান মান্নার নেতৃত্বে নিবন্ধিত রাজনৈতিক দল নাগরিক ঐক্য  তাদের পুরনো প্রতীক কেটলি বাতিল করে শাপলা চেয়ে আবেদন করেছে। পাশাপাশি তারা দোয়েল পাখিকেও বিকল্প হিসেবে চেয়েছে। নতুন জল্পনা শুরু হয়েছে—শাপলাকে ঘিরে প্রতীক ‘টানাটানি’ শুরু হয়েছে কি না।

মাহমুদুর রহমান মান্না এই বিষয়ে বলেন, “আমরা আগে নিশ্চিত ছিলাম না যে জাতীয় প্রতীক হিসেবে ব্যবহৃত শাপলাকে ইসি বরাদ্দ দেবে কি না। পরে মনে হলো আবেদন করে দেখি।”

নির্বাচন কমিশনের এক কর্মকর্তা বিবিসি বাংলাকে জানান, নতুন ১১৫টি প্রতীকের খসড়া তালিকায় শাপলা অন্তর্ভুক্ত রয়েছে, তবে তা এখনো চূড়ান্ত নয়। নির্বাচন কমিশনার আব্দুর রহমানেল মাছউদ জানান, “শাপলা যদি চূড়ান্ত তালিকায় যুক্ত হয়, তখনই তা কারো বরাদ্দ হবে। তখন মূল্যায়ন করা হবে, কে আগে আবেদন করেছে, কার দাবির ভিত্তি বেশি।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *