ফিচাররাজনীতি

তারেক-ইউনূস উদ্যোগে সমঝোতার সম্ভাবনা, স্বস্তিতে জাতি

১৩ জুন ২০২৫, এক বৃষ্টিভেজা সকালে লন্ডন যেন স্বাক্ষী হলো বাংলাদেশের ইতিহাসে এক অনন্য অধ্যায়ের সূচনার। দেশে নির্বাচনী অনিশ্চয়তা, প্রশাসনিক অকার্যকারিতা, রাজনৈতিক বিভাজন ও আইন-শৃঙ্খলার অবনতির সময়ে লন্ডনে বসে তারেক রহমান ও ড. মুহাম্মদ ইউনূস যে ঐতিহাসিক বৈঠকটি সম্পন্ন করলেন, তা নিঃসন্দেহে জাতির জন্য এক অভূতপূর্ব আশার আলো হয়ে উঠেছে। এই বৈঠকের প্রতিফলন ঘটেছে একটি যৌথ বিবৃতিতে, যেখানে ঘোষিত হয়েছে—২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের দ্বিতীয়ার্ধে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনী বিভ্রান্তি ও ষড়যন্ত্রের অবসান ঘটিয়ে এই ঘোষণা শুধু সময় নির্ধারণ নয়, একটি পরিপক্ব নেতৃত্বের প্রকাশ।

লন্ডনের বৈঠক অনেকের কাছেই স্মরণ করিয়ে দেয় ব্রিটিশ ভারতের গোলটেবিল বৈঠকের কথা। যদিও প্রেক্ষাপট ও কাঠামো ভিন্ন, তবে উভয় ক্ষেত্রেই প্রধান লক্ষ্য ছিল রাজনৈতিক সংকট সমাধানে সংলাপ ও সমঝোতা। ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের এই বৈঠকও তেমনি বাংলাদেশের নির্বাচনী ভবিষ্যৎ ও গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার এক বড় পদক্ষেপ। বলা চলে, ৫ আগস্ট ২০২৪ সালের গণ-অভ্যুত্থানের পরবর্তী সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক অগ্রগতি এটিই।

তারেক রহমান আজ শুধু বিএনপি’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান নন, দীর্ঘ ১৭ বছরের নির্বাসনেও যিনি দলকে ঐক্যবদ্ধ রেখেছেন, জনসম্পৃক্ততা হারাননি, যিনি দলে সংস্কার, তৃণমূলে অংশগ্রহণ ও কর্মসূচি পরিচালনায় অনন্য দক্ষতা দেখিয়েছেন। অন্যদিকে ড. ইউনূস, যদিও সরাসরি রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন না, তবু একজন বিশ্বস্ত মধ্যপন্থী হিসেবে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব পালনে তার যোগ্যতা প্রশ্নাতীত। দু’জনের যৌথ প্রচেষ্টায় একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পথ উন্মুক্ত হওয়ায় দেশের মানুষ স্বস্তি পাচ্ছে।

লন্ডন বৈঠকটি দলীয় নেতা-কর্মীদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা সৃষ্টি করেছে। এতদিন বিভিন্ন দিক থেকে যে ষড়যন্ত্র ও বিভ্রান্তির জাল বোনা হচ্ছিল, সেটি ছিন্ন হলো এই ঐতিহাসিক সিদ্ধান্তে। একদিকে বিএনপির নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্য দৃঢ় হচ্ছে, অন্যদিকে অন্তর্বর্তী সরকারও এবার নির্বাচনের দিকে মনোযোগী হওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। সবার মুখে এখন একটাই প্রত্যাশা—তারেক রহমানের দেশে ফিরে আসা।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্য অনুযায়ী, তার দেশে ফেরার ক্ষেত্রে প্রশাসনিক কোনো প্রতিবন্ধকতা নেই। জনগণও তা উপলব্ধি করছে। কারণ তারেক রহমানের প্রত্যক্ষ উপস্থিতি মাঠপর্যায়ের রাজনীতিকে উজ্জীবিত করবে, নেতাকর্মীদের মধ্যে সাহস সঞ্চার করবে এবং ৩১ দফার রূপরেখা বাস্তবায়নের পথকে সুসংহত করবে। গত বছর আগস্টে গণ-অভ্যুত্থান যে গণতান্ত্রিক সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচন করেছিল, তার বাস্তবায়নের জন্য একটি সাহসী, স্বচ্ছ ও দায়িত্ববান নেতৃত্ব প্রয়োজন। তারেক রহমান সেই নেতৃত্বের প্রতীক হয়ে উঠেছেন।

এটি বললে অত্যুক্তি হবে না যে, এই মুহূর্তে দেশের রাজনৈতিক অচলাবস্থার একমাত্র কার্যকর সমাধান হতে পারে তারেক রহমানের প্রত্যাবর্তন এবং তার নেতৃত্বে একটি সুসংগঠিত নির্বাচনী রোডম্যাপের বাস্তবায়ন। বাংলাদেশের জনগণ পরিবর্তন চায়, নিরাপত্তা চায়, স্বাভাবিক জীবন চায়—এবং সেই প্রত্যাশার কেন্দ্রবিন্দু এখন তারেক রহমান।

তবে মনে রাখতে হবে, সব অর্জন রক্ষা করতে হয় দৃষ্টিসতর্কতা ও গণতান্ত্রিক সংবেদনশীলতায়। অন্তর্বর্তী সরকারকে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। কিন্তু এ সরকার এখনো সফলতার দ্বারপ্রান্তে নয়। ভেতরের বিভাজন, প্রশাসনিক স্থবিরতা এবং আমলাতন্ত্রের সক্রিয় ষড়যন্ত্রে নানামুখী প্রতিবিপ্লবী চক্রান্ত চালু আছে। দেশের গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে এই সব বাধা চিহ্নিত ও নির্মূল করতে হবে।

সেই প্রেক্ষাপটে বলা যায়, ১৩ জুনের লন্ডন বৈঠক একটি ‘পলিটিক্যাল টার্নিং পয়েন্ট’। এই সভায় মূলত বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন একটি ব্যাকরণ তৈরি হলো—যেখানে সংলাপ, সমঝোতা, বাস্তববাদ ও নেতৃত্বের দায়বদ্ধতা একসঙ্গে মিলেছে। এখানেই নেতৃত্বের প্রকৃত প্রজ্ঞা এবং দৃষ্টিভঙ্গির প্রকাশ।

শেষ কথা, বাংলাদেশ এখন এক সন্ধিক্ষণে। আগামী নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার পথে জাতি যাত্রা শুরু করেছে। এই যাত্রাপথে তারেক রহমান এবং ড. ইউনূসের লন্ডন বৈঠক হয়ে থাকুক ইতিহাসের এক অনন্য মাইলফলক, যা ভবিষ্যতের নেতৃত্ব ও নীতিনির্ধারণে অনুপ্রেরণার দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে। আমরা আশা করি—যেখানে সংকট, সেখানেই থাকবে নেতৃত্বের দীপ্ত প্রত্যয়, সাহসিকতা এবং ভবিষ্যৎ নির্মাণের আশ্বাস।

লেখকঃ সাংবাদিক ও সমাজকর্মী

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *