সোনারগাঁ জাদুঘর ও গোপীনাথ সাহা সরদার বাড়ি

বেঙ্গল বার্তা

প্রায় ৬০০ বছরের পুরনো সোনারগাঁয়ের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক গোপীনাথ সাহা সরদার বাড়ি যা ঈসা খাঁর জমিদার বাড়ি বা ঐতিহাসিক বড় সরদার বাড়ি বর্তমানে সোনারগাঁ জাদুঘর নামেই পরিচিত। বাড়িটির পশ্চিম পাশে শানবাঁধানো ঘাট আর সজ্জিত পাড়বেষ্টিত পুকুরের সৌন্দর্য নিমিষেই যে কারো মন কাড়ে।

বাংলার প্রকৃতি ও পরিবেশে  গ্রামীণ জীবনধারা ও প্রাচীন ঐতিহ্যের নিপুণ রূপকেন্দ্রিক প্রায় ষোল হেক্টর স্থান জুড়ে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের অবস্থান। বাংলাদেশের ঐতিহ্যবাহী লোক ও কারুশিল্পের সংরক্ষণ, বিকাশ  ও সর্বসাধারণের মধ্যে লোকশিল্পের গৌরবময় দিক তুলে ধরার জন্য ১৯৭৫ সালে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীনের উদ্যোগে লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনটি প্রতিষ্ঠা করা হয়।

বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন এলাকায় রয়েছে শিল্পাচার্য জয়নুল আবেদীন কারুশিল্প জাদুঘর। এখানে স্থান পেয়েছে প্রাচীন গ্রাম-বাংলার ঐতিহ্যবাহী হস্তশিল্প, নকশিকাঁথা , বয়নশিল্পের কর্মপরিবেশ, জনজীবনের নিত্য ব্যবহার্য পণ্যসামগ্রী, লোকজ বাদ্যযন্ত্র, পোড়ামাটির নিদর্শন, তামা-কাসা-পিতলের নিদর্শন সহ প্রায় ৫ সহস্রাধিক নিদর্শন।

দেশিয় ঐতিয্য ও লোকজ নকশায় নির্মিত হয়েছে নান্দনিক কারুময় সেতু।

প্রায় ১২ হাজার দেশি বিদেশি লেখকদের প্রবন্ধ,কবিতা,গবেষণা গ্রন্থ, ম্যাগাজিনসহ বিবিধ বই সংরক্ষিত আছে এখানকার লাইব্রেরি ও ডকুমেন্টেশন সেন্টারে।

প্রতি বছর এখানে ১ মাস ব্যাপী লোক মেলা অনুষ্ঠিত হয়। দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে লোকজ শিল্পী ও কারুশিল্পীরা মেলায় অংশগ্রহন করেন।

ষাড়ের লড়াই সহ নান্দনিক সব নির্মানশৈলী সমৃদ্ধ ফাউন্ডেশনটির অনেকটুকু জায়গা জুড়ে রয়েছে জলরাশিতে পরিপূর্ণ সুবিশাল লেক।লোকজ সংস্কৃতির আদলে তৈরি বাঁশ বেতর গেট, ঐতিয্যঘেরা গ্রামীণ জীবনচিত্র,  দৃষ্টিনন্দিত উদ্যান ও নানা রকমের বৃক্ষাদির সমাহারে লেগে আছে শতভাগ বাঙ্গালীয়ানার ছাপ। 

গ্রামীণ বৈচিত্র্যময় লোকজ স্থাপত্য গঠনে বিভিন্ন ঘরে কারুশিল্প উৎপাদন, প্রদর্শন ও বিক্রয়ের ব্যবস্থা রয়েছে। এখানে কারুশিল্পীরা বাঁশ-বেত, কাঠ খোদাই, নকশিকাঁথা, জামদানি, একতারা, মৃৎশিল্প, ঝিনুক, শঙ্খ, পাট সামগ্রী তৈরি করে থাকেন। 

সোনারগাঁ জাদুঘরের বৃষ্টিস্নাত স্নিগ্ধ প্রকৃতি যেন টেনে নিয়ে যায় গ্রামবাংলার দুরন্ত শৈশবে।  

বাঙালি সংস্কৃতি হৃদয়-মননে ধারণ করে লোকসংস্কৃতি চর্চার লক্ষ্যে লালন চত্ত্বর এবং জয়নুল পাঠশালায় শিশুদের অংশগ্রহণে নাচ, গান, কবিতা আবৃত্তি ও ছবি আঁকার আসর ও প্রশিক্ষণ কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়।

সবুজ ছায়াবৃত শ্যামল প্রকৃতি আর কারুকাজ অলংকৃত এলাকাটির পরতে পরতে লেগে আছে বাঙালি সংস্কৃতি ও জীবনধারার অমলিন ছাপ।

বৈচিত্র্যে পরিপূর্ণ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের সজ্জিত এ বিস্তৃত অঞ্চল আমাদের নিয়ে যায় বাঙ্গালিয়ানার সোনালী অতীতের কাছে। 

Facebook
Twitter
LinkedIn

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

নির্বাচিত

কল্লোল যুগ

কল্লোল যুগ বলতে বাংলা সাহিত্যের একটি  ক্রান্তিলগ্নকে বোঝায়, যখন বাংলা কবিতা ও  কথাসাহিত্যে আধুনিকতার বীজ অঙ্কুরিত হয়েছিল। কল্লোল যুগের একটি প্রধান বৈশিষ্ট ছিল রবীন্দ্র বিরোধিতা। যে সময়ে কল্লোলের আবির্ভাব, তখন বাংলা সাহিত্যের সর্বকোণ কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রভাবে প্রোজ্জ্বল। কল্লোল যুগের লেখকদের মূল লক্ষ্য ছিল রবীন্দ্র বৃত্তের বাইরে এসে সাহিত্যের একটি মৃত্তিকাসংলগ্ন

বিস্তারিত »

বাংলা পঞ্জিকার আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত রূপ দেন ড. মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ

বিভিন্ন ভাষায় ডক্টর মুহম্মদ শহীদুল্লাহ’র দখল ছিল অসাধারণ ও অসামান্য। উর্দু ভাষার অভিধান প্রকল্পে তিনি সম্পাদক হিসেবে কাজ করেছেন। পরে পূর্ব পাকিস্তানি ভাষার আদর্শ অভিধান প্রকল্পের সম্পাদক হিসেবে বাংলা একাডেমিতে যোগ দেন। ১৯৬১ – ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত বাংলা একাডেমির ইসলামি বিশ্বকোষ প্রকল্পের অস্থায়ী সম্পাদক পদে নিযুক্ত হন তিনি। ১৯৬৩ সালে বাংলা একাডেমি কর্তৃক গঠিত বাংলা

বিস্তারিত »

‘নকশী কাঁথা’ কারুশিল্পের এক অনন্য সৃষ্টি

নকশী কাঁথা শব্দটির সাথে গ্রামবাংলার ঐতিহ্য উতপ্রেতভাবে জড়িত। আবহমানকাল ধরে এ দেশের মানুষ নকশী কাঁথা ব্যবহার করে আসছে।কাঁথার আভিধানিক অর্থ হলো – জীর্ণ বস্ত্রে তৈরি শোয়ার সময় গায়ে দেয়ার মোটা শীত বস্ত্র বিশেষ। আর নকশী কাঁথা হলো-গ্রাম বাংলার বধূ-কন্যারা মনের মাধুরী মেশানো রং দিয়ে সূঁচ আর সুতোর সাহায্যে সুনিপুণ হাতে

বিস্তারিত »